প্রতিশোধ পর্ব ৬

প্রতিশোধ পর্ব ৬

আবির নিরা কে বলে নদীর ধারে ঘুরতে যাবে। কিন্তু নিরা যেতে চায়না তাই তারা বাধ্য হয়ে বাসায় ফিরে আসে।

__ তৃণা সকালে নিরাকে দেখার পর থেকে খুব টেনশন এ আছে। এ ও কি সম্ভব, তার মতো দেখতে হুবহু আরেকজন মেয়ে। তার উপর যাকে পাবার জন্য এতো কিছু করলো আজ সেই মেয়ে তারই বউ। অতীতের কথা চিন্তা শুরু করে। তৃণা দের প্রথম ক্লাস টা ই ছিলো আবির স্যারের। প্রথম দেখায় ক্রাশিত হয় তৃণা। এরপর আবির যখন বোর্ডে কিছু লিখার জন্য ঘুরে তখন দুষ্টুমি করে মার্বেল ছুড়ে আবিরের দিকে। কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যা হয় আর কি। আবির ওই মুহুর্তে তৃণার দিকে ঘুরে তাকায় আর দেখেও ফেলে তৃণা কে মার্বেল ছুড়তে আর হটাৎ করে মার্বেল লাগে আবিরের কপালে। ব্যথা যতটা না পেয়েছে রাগ টা বেশি হয়ে গেছিলো। সাথে সাথে তৃণা কে ক্লাস থেকে বের করে দেয় আবির। তৃণাও রাগ করে খুব ক্লাসের বাইরে দরজার আড়ালেই দাঁড়িয়ে থাকে তৃণা। এরপর স্যার যখন ক্লাস থেকে বের হয় তখন স্যারের পায়ে তৃণা নিজ পা দিয়ে বাধা দেয় আর স্যার তৃণার উপর পড়ে যায়। আর এই দৃশ্য সব স্টুডেন্ট দেখে, নিজের কাছেই ছোট লাগে আবিরের। সব স্টুডেন্ট আবির কেই ভুল বুঝে, কিন্তু তৃণার ফাজলামি শুধু আবির টের পায়। তৃণার কাছ থেকে অপমান পেয়ে ডিপার্টমেন্ট এ যায়। সবাইকে খুলে বলে এই মেয়ের এই রকম অত্যাচার এর কথা। কিন্তু তৃণাও থেমে থাকার না কারণ সে খোঁজ নিয়ে ফেলেছে আবির স্যারের কিছুদিনের মাঝেই বিয়ে। তাই সুযোগ বুঝে আবিরের বাসায় গিয়ে দোতলার বারান্দায় লুকিয়ে থাকে। বারান্দায় রেলিং দেয়া ছিলো না এই সুযোগ কাজে লাগায় সে। আগে থেকেই পুলিশ কে ঘুষ দিয়ে রেখেছিলো সাইরা। সকালে আবির ঘুম থেকে উঠে বারান্দার দরজা খুলতেই তৃণার তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। আবির মুখ দেখতে পায় না মেয়েটা কে। চুল গুলো এলেমেলো করে রেখেছিলো তৃণা। আবির ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ভয়ে আর তখনই সাইরা বাসায় পুলিশ নিয়ে আসে। আর কাজের মেয়ে না বুঝেই দরজা খুলে দেয়। বাড়ি সার্চ করে মেয়েটি সহ আবির কে এক রুমে পেয়ে সাথে সাথে এরেস্ট করে আবিরকে। আর সাইরা তৃণাকে নিয়ে মামলা করায় ধর্ষণ মামলা। এতে কোর্টে গিয়ে মিথ্যা সাক্ষী দেয় সাইরা আর তৃণা। কিন্তু আবির প্রমাণ পাচ্ছেনা নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার। আবির উকিলের মাধ্যমে জামিন নেয় সব প্রমাণ করে দিবে বলে। আর তৃণাও কিছু বুঝে উঠার আগেই আবিরের গুন্ডাদের দের পাঠায় তৃণাকে তুলে আনতে কিন্তু তারা ভুল করে নিরা কে তুলে আনে।

__তৃণা এতোক্ষণে বুঝতে পারে সেদিন কেন তৃণাকে সহজে মুক্তি দেয় আবির।
সাইরা কে জিজ্ঞেস করে কি করবে এখন, কিন্তু সাইরাও সমাধান দিতে পারেনা। এবার তৃণা তার বাবাকে ফোন লাগায়।

__ হ্যালো, ড্যাডি তুমি কেমন আছো? ( কান্নার নাটক করে)

__ কিরে মামনি, কাঁদছো কেনো? কি হয়েছে বলো?

__ তৃণা আবিরের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা কথা বলে। কারণ জানে তার বাবাই তাকে সঠিক সমাধান দিবে।

__ তৃণার বাবা মেয়ের কান্ডে অবাক হয়ে বলে ” আবিরের থেকেও ভালো ছেলের সাথে তোমার বিয়ে দিবো। চিন্তা করিওনা মামনি আমার। ”

__ না আমি আবিরকেই চাই, আমি আবিরকে না পেলে বাঁঁচবোনা।

__ এসব কি বলছো তুমি, এমন পাগলামো করেনা সোনামনি।

__ তুমি এটা বলো, ওই মেয়ে মানে আবিরের বউ যাকে দেখলাম সে আমার মতো দেখতে হলো কিভাবে?

__ তৃণার বাবা একটু চিন্তিত গলায় বলে কিভাবে সম্ভব। তুমি তো আমার একমাত্র মেয়ে।

__ জমজ না হলে দুইজন কি হুবহু হয়। তাছাড়া আর যাই হোক আমি ওই নিরা কে মেরে ফেলবো। তাও ভালো আবিরের বউ আমি হতে চাই।

__ তৃণার বাবার মহা টেনশন শুরু, মেয়ে তার পাগল হয়ে গেছে। তাই মেয়ে কে বলে খুব শীঘ্রই ফিরে আসছে রাজশাহী তে মেয়ের কাছে। তৃণাও খুশি হয় ড্যাডি কে অনেক দিন পর দেখতে পাবে তাই।

.
.
__আবির নিরা কে ভালোবেসে বিয়ে না করলেও ভালোবেসে ফেলেছে দুইদিনে। মেয়েটার সৌন্দর্য, ঝগড়া করার স্টাইল, রাগ করা, নিরা যাই করুক না কেন নিরা কে পছন্দ করে ফেলেছে জীবন সাথী হিসেবে। নিরা ঘরে মুখ উল্টো দিক ঘুরিয়ে শুয়ে আছে। আবির পাশে গিয়ে বসতেই নিরা চিৎকার করে..

__ এক্ষুনি ঘর থেকে বের হন। বিয়ে করেছেন বলে কিনে নেন নি যে যা ইচ্ছা তাই করবেন।

__ কি করলাম, এতো রাগ কিসের নিরু।

__ আমার নাম নিরা, নিরু না।

__ আমি তো ভালোবেসে নিরু ডাকলাম।

__ ভালোবাসা, মাই ফুট, আমি আপনাকে ঘৃণা করি।

__ এমন করছো কেনো, কিছুই তো করিনি এখন।
ওকে যাই রাত্রের খাবারের ব্যবস্থা করি।

__ কি ছাই পাশ খেয়ে থাকেন, ওগুলো আমার সামনে আর আনবেন না।

__ আমি কি করবো রুমানা কে তো ছুটি দিয়েছি। সে থাকলে রান্না করে ভালো। এখন যদি তুমি ইই রান্না করো তাহলে।

__ কিহহ

__ সরি, ভুল হয়ে গেছে।

__ নিরা কিছু না বলেই নিচে নামে, রান্নাঘর খুঁজে ( কারণ চিনতোনা) , সেখানে গিয়ে কিছু খুঁজে পাচ্ছেনা। আবির পিছন থেকে কানের কাছে গিয়ে বলে কি খুঁজছো। নিরাও চমকিয়ে উঠে, পিছন ঘুরেই আবির কে দেখে দুইটা কিল বসিয়ে দেয় আবিরের বুকে । আবির নিরার হাত ধরে ফেলে..

__ হাত ধরবেন না।

__মারলে কেন

__ বেশ করেছি, ভয় দেখানোর শাস্তি।

__ কি খুঁজছো?

__ আটা, সারাদিন ছাইপাঁশ খেয়েছি, এখন রুটি খেতে ইচ্ছে করছে।

__ আবির আটা, লবণ, পাতিল, তাওয়া সব দেখিয়ে দেয়। রুটির সাথে কি করবে?

__ ডিম আছে??

__ সব দেখিয়ে দেয়ার পর আবিরকে বাইরে যেতে বলে নিরা। আবির লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলো নিরা কি করছে। শয়তানি বুদ্ধি মাথায় আসে আবিরের।
নিরা যখন ডিম ফেঁটিয়ে রাখে আবির লুকিয়ে এসে ডিম অল্প একটু নিরার গালে মাখিয়ে দেয়। ডিমে মরিচ দেয়া ছিলো এটা দেখেনি আবির, নিরার মুখ জ্বলে গেছে, উফফ বলে চিৎকার দেয়।

আটা মাখা হাত দিয়েই আবিরের গাল খামচিয়ে দেয়।

চলবে…

প্রতিশোধ পর্ব ৭

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top