এমন করে বলতে হয়না, লক্ষী মেয়ের মতো খেয়ে নাও বলে আবির খাইয়ে দেয় নিরাকে। ( নিরা মনে মনে ক্ষেপা হলেও বেশি জেদ দেখাতে পারেনা, তাই চুপচাপ খেয়ে নেয়) খাওয়ার পর উল্টো দিক ঘুরে শুয়ে পড়ে, এমনিতেই অসুস্থ, এরউপর সারা দিন বাইরে থাকায় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আবির সব রেখে এসে নিরার গায়ে কম্বল ঠিক করে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়ে।
__ আবিরের বাসা টা তার বাবার ছিলো, এখন তার নামে। দোতলা বাসায় পুরোটা ই যেন আধুনিকতার ছোঁয়া। দামী দামী ফার্নিচার, আর ঘর সাজানোর সোপিচ আর কৃত্তিম ফুল চারিদিকে। বাসাতে একটা অনুষ্ঠান এর পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে সাজানো হয়েছিলো বাসাটা। first January ছিলো আবিরের বাসায় অনুষ্ঠান। তার আগেই সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়।
__ নিরা ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখে তার চারিদিকে অনেক গুলি শাড়ি, থ্রিপিচ, গাউন, টপস, মেকআপ বক্স, ম্যাচিং অলংকার সব কিছুই রাখা। নিরার চোখ দুটি আবির কে খুঁজছে কিন্তু আবির কে না দেখে সব কিছু সরিয়ে নিচে নামতেই মাথার উপর ফুলের পাপড়ি পড়া শুরু করে। নিরা বেশ উপভোগ করে এই ব্যাপার টা। এরপর আবির এসে হাততালি দিয়ে বলে শুভ জন্মদিন ম্যাডাম। ( নিরা ভুলেই গেছিলো আজ তার জন্মদিন, কিন্তু আবির কে দেখেই চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়)।
__” আমার জন্মদিন আপনি জানলেন কিভাবে? ” ( নিরা)
__ সারপ্রাইজ ( আবির)
__ হ্যাঁ! তাইতো , এসব না করে গলা টিপে মেরে ফেললেও তো পারতেন মিঃ আবির স্যার। ( নিরা)
__ এসব কি বলছো, আর এভাবে কখনো বলবেনা। (আবির)
__ আপনাকে আমি ঘৃণা করি, এসব করলেই ভাববেন না ভালোবাসবো। ( নিরা)
__ বাদ দাও, নাস্তা করো, আর এগুলোর মাঝে এক সেট পরে রেডি হয়ে থাকিও। দাওয়াত দিয়েছে তোমার ফ্যামিলি, যেতে হবে। ( আবির)
__ নাস্তাতে পাউরুটি, কলা, ফল আর চা দেখে নিরার খুব রাগ হয়। ইচ্ছে করেই ঘরের মাঝে কলার খোসা ফেলে দেয়। খায় আর মনে মনে বলে এগুলো কি মানুষ খায়। ( সে এসব খেয়ে অভ্যস্ত না তাই)
__ আবির বাইরে থেকে এসেই কলার খোসা না দেখেই পা দেয় আর স্লিপ খেয়ে নিরার উপর পড়ে যায়। নিরা আবিরকে সরিয়ে দিয়ে বলে ” লজ্জা করে না, আর এমন যেন না হয়। ” আবির উঠে দেখে কলার খোসা, একটু রাগী স্বরে বলে ” এটা এখানে কোথেকে আসলো “। নিরা কলার খোসা দেখে মিটিমিটি হেসে বলল ” সরি, আসলে, মাফ করবেন “।
নিরার হাসিমুখ দেখে আবির বেশ খুশিই হয়। হাসলে যেন নিরাকে অপ্সরীর মতো লাগছে। এতোটা সুন্দর সে দেখতে যেন সারাজীবন এভাবেই চেয়ে থাকা যায়।
__ ” কি দেখেন এতো, বেশিক্ষণ কেউ চেয়ে থাকলে আমার লজ্জা লাগে। এখন যান, আমি রেডি হবো।” ( নিরা বলে)
আবির চলে যায়, নিরা শাওয়ার শেষ এ হালকা পিংক কালার একটা শাড়ি বেছে নেয়। শাড়ি টা পরে চোখে কাজল দেয় গাড় করে কিন্তু মেকআপ সে করেনা। পিংক কালার চুরি, গহনা পড়ে নেয়। চুল গুলো খোলা রেখে পাশের ফুলদানি থেকে পিংক গোলাপ নেয় ( তাঁজা গোলাপ, আবির ই আনিয়ে রেখে ছে হয়তো) মাথার একপাশে ফুল গুজে দেয়।
বাইরে বের হয় নিরা, নিচে আবির সোফায় বসে আছে। নিরাকে দেখে এক ভাবে তাকিয়ে আছে আবির, এতো সুন্দর একটা মানুষ হয় কিভাবে। নিরা আবিরের ধ্যান ভাঙিয়ে বলে ” এইযে আপনার জন্য সাজিনি, যে এইভাবে দেখবেন। ”
__ তো কার জন্য সেজেছো? (আবির)
__ ” সবাইকে বলেছেন আপনি ভালোবেসে বিয়ে করেছেন, নিজেকে সুখী না দেখালে তো আবার আপনার অপমান। তাই বাইরের মানুষের সামনে সুখী হয়েই থাকতে চাই। ” ( নিরা)
__ আজ হয়তো ভালোবাসোনা কিন্তু পরে একদিন বাসবে, বলে দিলাম (আবির)
__ বয়েই গেছে আমার, একজন রেপিস্ট কে ভালোবাসতে। (নিরা)
আবির আর কিছু না বলে নিরা কে নিয়ে প্রথমে মেডিকেল ভার্সিটি যায়। সেখানে কলিগ দের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় ওয়াইফ বলে। নিরাও বেশ অবাক হয় আবিরের ব্যবহার এ। এটাও বলে দেয় নিরা ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী। কলিগ রা মজা করে বলে তাহলে প্রথম দিন ক্লাস টা যেন নিয়েই যায়। ছাত্রী হাজবেন্ড এর ক্লাস করবে, সবাই বেশ উতসাহী। তাই আবির ও গেলো নিরাকে নিয়ে ক্লাসে।
__ তৃণা আবির কে দেখে যতই না খুশি হয়, সাথে নিরা কে দেখে যেন আকাশ থেকে পড়ে। এই মেয়ে যে একেবারেই তার মতো দেখতে। কিন্তু কিভাবে সম্ভব আর এই আবির স্যারের সাথে কি করছে। তৃণার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায় শুভ্র স্যারের কথাতে। শুভ্র স্যার ক্লাসে ঘোষণা দেন আবির স্যার নতুন বিয়ে করেছেন তোমাদের ক্লাসের ছাত্রী কে। এতে সবাই খুশি হলেও তৃণা আর সাইরা একে অপরের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। সবাই অবশ্য নিরা আর তৃণাকে একই রকম দেখে অবাক ও হয়। দুইটা মেয়ে একইরকম আবার তাদের বাবা মা ও আলাদা। এই প্রথম দুইজন কে সবাই একসাথে দেখছে। এর আগে বেশি ক্লাস ও হয়নি, আর দুইজন একসাথে কখনো ক্লাসে আসেনি।
__ নিরাও বেশ অবাক হয় তৃণাকে দেখে, কেউ বলতে পারবেনা সে আর তৃণার চেহেরাতে কোন তফাৎ নেই ।
__ সবাই ক্লাস থেকে বের হয়ে আসে নিরা কে নিয়ে আবির নিরার বাবার বাসায় যায়। এই প্রথম আবির গাড়ি ছাড়া হাটছে কারণ নিরার বাসাটা একটু গলিতে, সেখানে গাড়ি ঢুকে না। নিরার সাথে আবির ওদের বাসায় গিয়ে বেশ কথা বার্তা বলে নিরার পরিবারের সাথে, নিরাও বেশ হাসিখুশি ছিলো সবার সাথে।
কিন্তু নিরার মনে এক্টাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, কে এই তৃণা।
নিরা রান্নাঘর এ মা কে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করেই বসে ” আচ্ছা মা, জমজ ছাড়া কি দুইটা মানুষ একই হয়? ” এমন প্রশ্নে যেন নিরার মা একটু ঘাবড়িয়ে যায়। সেটা না দেখেই নিরা আবারোও বলে ” আজ একটা মেয়েকে দেখলাম হুবহু আমার মতো দেখতে, আমার সাথেই পড়ে। কিভাবে সম্ভব মা! ”
__ নিরার মা এবার রাগান্বিত হয়ে বলে “আমি কি জানি? হতেও পারে! ”
__ নিরার মায়ের ব্যবহার ও নিরাকে অবাক করে দেয়। কিছুই না বলে চলে আসে সে। খাওয়া দাওয়া করে বিকেলে বের হয়ে যায় আবির আর নিরা।
চলবে……