রাত্রে বাসায় ফিরে তৃণার হাবভাব দেখেই পুরো ই বুঝে যায় এটা তার নিরা নয়। তাও নাটক করতে থাকে আবির।
__ নিরা, তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চাই। ( আবির)
__ জ্বী বলেন ( তৃণা)
__ আসলে কিভাবে যে বলবো বুঝছি না। ( আবির)
__ ন্যাকামি না করে বলে ফেলুন। ( তৃণা)
__ আসলে, সব দোষ ওই তৃণার, তাই ভুলবশত তোমাকে তৃণা ভেবে ওই কাজ করে ফেলি। টেস্ট এর রিপোর্ট পজিটিভ, মানে তুমি প্রেগন্যান্ট। ( আবির)
__ ( তৃণা খুব ভয় পেয়ে যায়, কি বলছে আবির এইসব, সে তো পুরাই সুস্থ, ধরা পড়ে যাবে সে, ভয়ে ভয়ে বলে) মানে কি?
__ এতো ভয় পাচ্ছো কেনো তুমি? কি হয়েছে?
__ না কিছুনা, সারাদিন অনেক ধকল গেছে এখন ঘুমাবো। ( তৃণা এতো দিন আবিরের কাছে আসার চেষ্টা করেছে আর আজ পালাচ্ছে। সে চেঞ্জ করেই শুয়ে পড়ে বিছানাতে) ( আবির তার পাশে ঘুমাতে গেলে বলে আপনি আমার কাছে আসবেন না দূরে থাকেন। )
আবির এইসব ব্যবহার এ পুরো টা ই বুঝে যায় এটা নিরা না। নিরা আর যাই হোক, নিরার রাগ করার স্টাইল টা আলাদা।
আবির কিছু না বলে পাশের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
‘
‘
‘
নিরা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে তৃণার ড্রেস পড়ে নেয়। তৃণার বাবা নিচে আগে থেকেই উঠে বসে ছিলো।
__ হাই, ড্যাডি। [ নিরা ]
__ তৃণা তুমি! কখন এলে মামনি? আবির কে ছেড়ে আসা তোমার উচিৎ হয়নি। ( তৃণার বাবা)
__ আরে আরে কি বলছো ড্যাডি, আমি তো কাল রাত থেকেই এখানে আছি। নিজের মেয়ে কেও চিনতে পারো না। সত্যি করে বলো তো আমি কে? ( নিরা)
__ আয়ায়ায়ায়া আমি কিছু জানিনা ( তোতলিয়ে)
__ দেখো ড্যাডি, আমি আমার মা কেও সেইম কথা জিজ্ঞেস করেছি। সেও এড়িয়ে গিয়েছে, এখন তুমিও এড়িয়ে যাচ্ছো। কি সম্পর্ক আমাদের দুইজনের? আমরা একই রকম দেখতে কিভাবে?
( নিরা)
__ আ আ আ আমি সত্যিইইইই জানিইইই নায়ায়া ( তৃণার বাবা)
__ তার মানে আমি ধরে নিলাম তৃণা তোমার মেয়ে না। ( নিরা)
__ নাহহহ! তৃণা আমার ই মেয়ে।
__ তাহলে আমি কে? ( নিরা)
__ তুমি কে, আমি তা জানি। কিন্তু তুমি আমার মেয়ে নও, তৃণা…………. ।
__ তাহলে তৃণা কে? ( নিরা)
[ ঠিক এই সময় তৃণা আবিরের বাসা থেকে পালিয়ে আসে, কিন্তু নিরা আর ওর বাবার কথা শুনতে পেয়ে লুকিয়ে থাকে, কথা শুনতে থাকে লুকিয়ে লুকিয়ে ]
তৃণার বাবা বলতে শুরু করে
__ আমার ক্লাস নাইন এ থাকতে একটা মেয়ের সাথে প্রেম হয়ে যায়। কিন্তু মেয়েটা আমার সাথে ৫ বছর প্রেমের পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। জানিনা তার কি হয়েছিলো, অনেক খোঁজ করার পর জানতে পারি সে বিয়ে করেছে আমার ই বন্ধু কে। আমার প্রচুর কষ্ট হয়েছিলো সেইদিন কিন্তু সব কষ্ট মেনে নেয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিছুদিন পর শুনতে পাই তার ছেলে হয়েছে। যে স্বপ্ন আমি দেখেছিলাম সেই স্বপ্ন আজ অন্য কারো সাথে পূরণ করেছে।
আমি আমার বন্ধুকে শত্রু হিসেবে গণ্য করি। প্রতিশোধ এর নেশা উঠে যায় আমার রক্তে। আমার পড়াশোনা শেষ করে বাবার বিজনেস এ হাত দিয়েই শুরু করি প্রতিশোধ এর খেলা। বন্ধু মাহমুদ আর প্রেমিকা হেনার সাথে ভালো ই প্রতিশোধ নিতে পেরেছিলাম আমি।
মাহমুদ এর ব্যবসায় লস করাতে শুরু করি। আস্তে আস্তে সে এতো লস খেয়ে যায় সে রাস্তার ফকির হবার দশা হয়ে যায়। তখন হেনা দ্বিতীয় বারের মতো প্রেগন্যান্ট ছিলো । হেনার জীবন মরণের রাত ছিলো সেইটা, হেনাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেদিন হেনার দুই টা মেয়ে হয়। হেনার জ্ঞান ফিরতে অনেক সময় লাগে। আর তখন ডাক্তার এর বিল যতো হয় সেটা শোধ করার ক্ষমতা ছিলো না মাহমুদ আর হেনার। সেই সুযোগ টাই কাজে লাগাই আমি।
নার্স কে টাকা দিয়ে মাহমুদ এর কাছে পাঠায়। নার্স মাহমুদ কে বলে
নার্স : মিঃ মাহমুদ , আপনার বিল তো অনেক বেশি ( ৫০০০০টাকা)। আর আপনি তা শোধ ও করতে পারবেন না। আর এদিকে একজন পেশেন্ট এর বাঁচামরা অবস্থা। সন্তানের মৃত্যু হয়েছে, আপনি যদি আপনার একটা সন্তান কে বিক্রি করে দিতেন তাহলে তারাও সন্তান পেতো আর আপনারাও টাকা পাবেন।
২ লাখ দিবে বলেছে তারা।
মাহমুদ খুব লোভী হয়ে উঠেছিল তখন তাই নার্স এর সাথে রাজি হয়ে যায়। বিক্রি করে দেয় তার এক মেয়েকে।
আসলে সেদিন আমার স্ত্রী মারা যায়নি, কারণ আমি তো বিয়েই করিনি। শুধু মাত্র প্রেমিকাকে পাপবোধে রাখবো বলেই এই সন্তান টা নিয়ে নিই। হেনা খুব কষ্ট পেয়েছিলো সেদিন। নিজ সন্তান কে মাহমুদ বিক্রি করে দেয় বলে আজও মাহমুদ কে ক্ষমা করেনি হেনা। আর তৃণা কে নিয়ে আমি চলে গিয়েছিলাম ঢাকা। কখনো এই শহরে আনতে চাইনি, কিন্তু তৃণার মেডিকেল এ পড়ার জেদের জন্য তাকে আনতে আমি বাধ্য হই।
__ আর আপনার সেই মেয়ের জন্যই আমাকে রেপ এর স্বীকার হতে হয় ( কান্নার কণ্ঠে নিরা) আপনাদের প্রতিশোধ এর আগুনে আমাদের জীবন টা জ্বলে গেলো। আজ এক বোন আরেক বোনের সংসার নষ্ট করতে গেছে। আর আপনিও তাতে সাই দিয়েছেন। আমি তো আবির স্যার কে বিয়ে করতে চাইনি। আপনার মেয়ের জন্য আবির আমার সাথে যে অন্যায় করেছে তার জন্য ক্ষমা আবির কে কখনো করবোনা। আর তৃণাকেও কখনো ক্ষমা করবোনা।
__ ( আড়াল থেকে তৃণা বের হয়ে আসে)
আমি সব শুনেছি ড্যাডি, আমি তোমার মেয়ে না। ( কান্না করে খুব)
__ নারে মা, তুমি আমার মেয়ে ছিলে থাকবে। ( তৃণার বাবা)
__ নাহ, তুমি আমার বাবা না, তাছাড়া তোমার জন্য আমি কাল নিজের মা কে অপমান করেছি। ( তৃণা)
নিরাকে তৃণা বলে
__ আমি ভেবেছিলাম জোর করে ভালোবাসা হয়। কিন্তু না, আমি জোর করে ভালোবাসা পেতে গিয়ে বুঝেছি সেটা আমার জন্য না। আবির স্যার তোমাকে খুব ভালোবাসে নিরা। আমি চলে এসেছি ওই বাসা থেকে। তোমার ভালবাসা তোমারি আছে, তুমি আর তোমার সন্তান মিলে স্যারের সাথে সুখেই থাকিও নিরা।
__ জানি আবির আমায় ভালোবাসে বোন। বলে তৃণাকে জড়িয়ে ধরে নিরা।
তৃণা এতো সত্যি কথা জানার পর পাগলের মতো আচরণ শুরু করে, এরপর অজ্ঞান হয়ে যায়। তৃণার বাবা খুব কান্নায় ভেঙে পড়ে। নিরা, তৃণার বাবা তুষার, সাইরা মিলে তৃণা কে হাসপাতালে নিয়ে যায়। নিরা আবিরকে ফোন দেয়, মা আর ভাইকেও ফোন দেয় নিরা। সবাইকেই সব খুলে বলে ফোনে।
আবির নিরার কাছে আসতেই আবির এর কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে শুরু করে নিরা।
__ নিরা, এতো ভেঙে পড়িও না সব ঠিক হয়ে যাবে। ( আবির)
__ এতো গুলো সত্য কথা আমি হজম করতে পারছিনা। ( নিরা)
__ আহহ সব মানলাম, তৃণার বাবা যা বলেছে তাতে তৃণা তোমার বোন। কিন্তু তোমার মায়ের কাছেও তো সব শুনা উচিৎ তাইনা। হয়তো উনি বানিয়ে বানিয়ে বলেছে। ( আবির)
__ হ্যাঁ হতে পারে আবির, আপনি ঠিক বলেছেন। আমি মায়ের কাছে এর জবাবদিহি চাইবো। ( নিরা)
__ এখন একটু চোখ টা মোছো। (আবির)
__ কাল আমি ছিলাম না আপনার পাশে ( নিরা)
__ জানতাম, সেটা তৃণা বুঝে ফেলে চলে আসে। ( আবির)
__ আমার জন্য টেনশন করেন নি, যদি বিপদ হয়ে যেতো। ( নিরা)
__ নাহ, কেনো জানি মনে হচ্ছিলো তুমি সেফ আছো। ( আবির)
__ হুম সেফ ই ছিলাম , উনি আমাকে নিজ মেয়ের মতো যত্ন করেই রেখেছিলো। ( নিরা)
__ আচ্ছা এসব বাদ দাও, তুমি কেমন আছো সেটা বলো। ( আবির)
__ আমি, আপনার সন্তান সবাই সেফ আছি। ( নিরা)
__ তুমি জানতে এই কথা ( আবির)
__ আপনি রিপোর্ট আলমারি তে লুকিয়ে রেখেছিলেন সেখানে দেখেছিলাম। কাউকে কিছুই বলিনি কারণ এটা গর্ব করার বিষয় নয়। ( নিরা)
__ ওভাবে বলিও না, এটা আমাদের ভালোবাসার সন্তান । সব ভুলে যাও নিরা, শুধু শুধু কষ্ট বাড়বে। ( আবির)
__ হু ( নিরা)
নিরা মা, ভাই আসে হাসপাতালে । নিরার কাছে সব কিছু শুনে, তৃণা তার বোন তখন নিরার মা মুখ লুকিয়ে ফেলে। নিরার মা এতো দিন পর তার পুরনো প্রেমিক কে দেখে অবাক হয়ে যায়।
__ তুমি ( হেনা)
__ চিনতে পেরেছো তাহলে ( তুষার)
__ না চিনার কি আছে ( হেনা)
__ প্রতারক তুমি, তোমার ভুলে যাওয়ার ই কথা। ( তুষার)
__ আমাকে প্রতারক বলার আগে উচিৎ ছিলো আমার সাথে কি হয়েছিলো সেটা জানা। ( হেনা)
__ আহহ মা ( নিরা) বাদ দাও তো , যা হবার হয়ে গেছে। পরে কথা বলিও, এখন এসব কিছুই ভালো লাগছেনা ।
নিরা সকাল থেকে না খেয়ে এসব টেনশন এ সেও জ্ঞান হারায়। আবির নিরাকে ভর্তি করিয়ে দেয় কেবিবে। দুই বোন দুই কেবিনে ভর্তি হয়ে আছে, আর বাইরে সবাই চিন্তিত ।
#বিঃ_দ্রঃ ( আরও অনেক গুলি পর্ব হবে গল্প টার অনেক প্রেম কাহিনী ও আছে। আমার ৫ তারিখ এক্সাম আছে । এর আগে আর লিখতে পারবোনা। ফেসবুকে ও আসবোনা এই তিন দিন। তাই বাকি পর্ব দিবো এক্সাম শেষ করে ৫ তারিখ সন্ধ্যায়। ভোট এর জন্য এক্সাম আটকিয়ে আছে। একটু ধৈর্য সবাইকে ধরতেই হবে )
চলবে……….