ডাক্তার সাইফ আহমেদ এর সামনে বসে আছে নিরা আর তৃণা। সাইফ প্রথমে দুই বোন কে দেখে নেয় কিছুক্ষণ । তৃণাকে বেশি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে সাইফ, তৃণা হালকা গোলাপি রঙের টপস পড়েছে আর চুলগুলো পিছনে বাধা, ঠোঁট এ তেমন কিছু দেয়নি সে এমনিতেই সুন্দরী, ড্রেসের জন্য তাকে বেশি সুন্দরী লাগছে। তারপর তৃণাকে জিজ্ঞেস করে
__ এখন কেমন আছেন?
__ জ্বী কিছুটা ভালো ( কণ্ঠে হালকা ভয় মিশানো)
__ আপনি আমাকে এতো ভয় পাবেন না।
__ না না! ভয় না, কথা বললেই এমন হয়ে যাচ্ছে। ( তৃণা)
__ মানুষের জীবনে কখনো কখনো অনেক কিছু ঘটে, আর সেটাকে মেনে নেয়াটাই সবচেয়ে উত্তম। আপনাকে আজ আমি একটা জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। দেখবেন ভালো লাগবে, কি আপনি যাবেন তো ? ( সাইফ)
__ তৃণা মাথা ঝুকিয়ে না বলতে চায় তখন নিরা তৃণার হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে ডাক্তার কে বলে ওর একমাত্র বোনের ভালোর জন্য যেটা দরকার সেটাই যেন করেন। তৃণাও নিরার কথার সাথে একমত হয়ে গেলো। নিরাকে চেম্বার এ বসিয়ে রেখে তৃণাকে নিয়ে হাস্পাতালের ভিতরে গেলো।
তৃণাকে সাইফ সবার সাথে কথা বলতে বলে। তাদের মাঝে একেকজনএর একেক কষ্ট। তৃণা সবার সাথেই কথা বলা শুরু করে। প্রথমে এক বয়স্ক মহিলা এর সাথে কথা হয়, মহিলা বলে তার বাবা মা কেউ ছিলো না কিন্তু ভাগ্যক্রমে বড়লোক ছেলের সাথে বিয়ে হয়, সেখানে তার তিন টা ছেলে আছে। কিন্তু ছেলেরা তাকে অবহেলা করতে করতে পরে আর খোঁজ নেয়নি। তৃণা নিজের কষ্ট বলে ওই মহিলাকে, নিজের দুঃখ শেয়ার করে নিজেকে একটু হালকা লাগছে। পরে আরেকজনের কাছে যায়, মহিলার দুই পা নাই তাও সে হুইলচেয়ারে বসেই ফুটবল খেলছে। ছবি আঁকাতে পারে, সবার সাথে বেশ হাসিখুশি আছে। তৃণা উনার সাথে কথা বলে বেশ আনন্দিত হয়। মনে মনে ভাবে বাবা নাই তো কি হয়েছে আরোও তো আছে, মা আছে বোন আছে তাদের জন্য তো নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। বাবা বাবা করে মা বোন কে কতোইনা কষ্ট দিচ্ছে সে।
বেশ অনেকের কষ্ট দেখে নিজের কষ্ট খুব কম লাগছে তৃণার তখনি সাইফ এসে বললো
__ এখন কেমন লাগছে।
__ জ্বী, বাবার জন্য মা বোন কে এতো কষ্ট দেয়া উচিৎ হয়নি। ( তৃণা)
__ আপনি মেডিকেল স্টুডেন্ট, ভালো ছাত্রী, আপনার জন্য ভালো ক্যারিয়ার অপেক্ষা করছে। আপনার কি বিপদে ভেঙে পড়া সাজে। আপনি অন্যকে বুঝাবেন, কখনো নিজে ভেঙে পড়বেন না। ( সাইফ)
__ আমি এখন অনেকটাই বুঝতে পারছি, ক্লাস শুরু হবার পর তো আর মনোযোগ ই দেইনি। কিন্তু পড়াশোনা তো করতেই হবে। ( তৃণা)
সাইফ এতো বছর পড়াশোনা করেছে, বিদেশেও গেছে, তার কতো বড় বড় ডিগ্রি । কিন্তু কখনো কোন মেয়েকে তার ভালো লাগেনি অথচ এই মেয়েটাকে খুব ভালো লাগছে সাইফের। কথায় কথায় মেয়েটাকে সাইফ নিজের কার্ড দিয়ে দেয়। বলে যখনি ডিপ্রেশন এ থাকবেন ফোন করবেন। সাইফ প্রফেশনাল কার্ড না দিয়ে পারসোনাল কার্ড দিলো। সাধারণত সবাইকে এই নাম্বার দেয় না।
দুইজনে চেম্বারে ফিরে আসে, নিরা বোন কে হ্যাপি দেখে খুব আনন্দিত হয়। ডাক্তার এর কাছ থেকে বিদাই নিয়ে দুইজনে বাসায় ফিরে, তৃণাকে নামিয়ে দিয়ে মায়ের সাথে কিছু কথা বলে নিরা আবিরের বাসায় ফিরে যায়।
এতো পরিশ্রম করে নিরা খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে, বাসায় ফিরেই নিরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। রোমানা খালা এসে নিরার সেবা করে ঠিক করে। আবির সারাদিন পর বাসায় এসে নিরাকে বেডে দেখে চমকিয়ে যায়।
__ কি হয়েছে, খুব ক্লান্ত তাই না ( আবির)
__ আসলে, ,,, ( নিরা)
__ হ্যাঁ এই কয়দিন যা যাচ্ছে তোমার উপর দিয়ে। এভাবে চলতে থাকলে তুমি আরোও অসুস্থ হয়ে পড়বে। আমি যতক্ষণ থাকি তোমার কোন ক্ষতি হতে দিবোনা।
বিকালে বান্ধবী মিশির চেম্বারে গিয়ে দেখিয়ে আনে। নিরা খুব অবাক হয়, আবির এর কাছে কিছু চাওয়ার আগেই সব কিছুই পেয়ে যাচ্ছে। আর তৃণাও প্রায়ই সময় সাইফের সাথে কথা বলছে। তৃণার খুব ভালো লাগে সাইফ কে। ওর সাথে কথা বললে সব হতাশা দূর হয়ে যায় তৃণার।
তুষারের মাথায় আঘাত লাগার জন্য ব্রেইন অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছিলো তাও সবাই আশা নিয়ে ই চিকিৎসা চালিয়ে যায়। আরোও ৮ মাস পার হয়ে যায় আবিরের ভালোবাসায় নিরার জীবন খুব সুখের ছিলো আর তৃণাও সাইফের সাথে কথা বলেই বেশ হ্যাপি কেউ কাউকে ভালোবাসার কথা বলেনি কিন্তু ভালোবেসে ফেলেছে সেটা দুজনের মনের মাঝেই রাখে। তৃণা মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ এখন আর মাসুদ সব দেখাশোনা করছে। হেনা মাসুদের বিয়ে দিয়ে দেয় এক মেয়ের সাথে । মাসুদ আর ওর বউ মিতুর বেশ সুখের সংসার।
নিরার ডেলিভারির ডেট হয়ে যায়, আবির তাড়াতাড়ি করে মিশির হাসপাতালে ভর্তি করে নিরাকে। সেখানে নিরার কোলজুড়ে আসে পিচ্চি এক্টা ছেলে বাবু। নিরার জ্ঞান ফিরে সন্তানের মুখ দেখে বেশ হ্যাপি হয়। চোখ দিয়ে পানিও ঝড়ে। আনন্দের পানি কি যন্ত্রণার সে টা বুঝেনা নিরা।
নিরা বাসায় ফিরে, বোনের ছেলে কে দেখতে তৃণাও আসে। বাড়িতে আবিরের মা, বাবা, তৃণা, হেনা, মাসুদ, মিতু সবাই এসেছে ছোট্ট বাবুকে দেখতে। সবার মাঝেই আনন্দ, রুম টা একটু খালি হতেই হেনা নিরাকে বলে…
__ তৃণার যে কি হয়েছে? সব সময় ফোনে কথা বলছে।
__ হু মা, প্রেম করছে মনে হয়। ( নিরা)
__ কার সাথে?
__ সাইফ ( নিরা)
__ তোকে বলেছে তৃণা ( হেনা)
__ এগুলো বলা লাগবে কেনো? আমি কয়েকদিনের মাঝেই আবিরের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলবো। ( নিরা)
__ ওকে, তাই বলিস। ( হেনা)
আবির এর বাবা মা নাতিকে পেয়ে যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে আছে। সব সময় নাতির কেয়ার নেয়ার খবর নেয়, এতো দিন আবির কে যতটা সময় দেয়নি ব্যস্ততা র জন্য নাতিকে আর আবিরকে সে সময় টুকু দেয়ার চেষ্টা করছে।
রাত্রে
__ শোনো একটা কথা ছিলো ( নিরা)
__ বলে ফেলো, তোমার সব কথা শুনার জন্য বান্দা হাজির। ( আবির)
__ এভাবে বলছো কেনো? ( নিরা)
__ ভালোবেসে বলছি ( আবির)
বলেই নিরার কপালে আবির কিস করে। আবিরের বেশ ইচ্ছে করে নিরার সাথে খুনশুটি করতে কিন্তু নিরা এসব পছন্দ করেনা। এবার ও নিরা আবিরকে সরিয়ে দেয়।
__ তোমার প্রব্লেম টা কি, শুধু আমার সাথে ফাজলামি না করলে বুঝি তোমার চলেই না। ( নিরা)
__ এতো রাগ করছো কেনো? ওকে সরি আর হবেনা। কাজের কথা বলো? ( আবির)
__ কিছু না, যাও সামনে থেকে ( নিরা)
আবির কে নিরা কখনো মন থেকে মেনে নেয়নি তাই সহজে আপন করে নিতে পারেনা। প্রায়ই সময় অপমান করেছে আবিরকে শুধুমাত্র এক্টাই কারণ। আবির নিরার কথা তে অপমান বোধ করে তাও প্রকাশ করেনা কখনো। নিজের অপরাধ বোধে নিরা তাকে হেলা করে সেটা সে জানে। তাই ঘুরেঘুরে নিরার কাছে ই যায়। নিরা বাইরে সবার সাথে হ্যাপি কাপলের অভিনয় করলেও আবির যখন একা থাকে ভালো বিহেভ কখনো ই করেনা।
অনেকদিন পর তুষার চোখ খুলে দেখে, অনেক আঘাত সহ্য করে কেউ সাধারণত বাঁচতে পারেনা কিন্তু তুষার এর জ্ঞান ফিরেছে। এই খবরে সবাই হাস্পাতালে যায়।
_ আস্তে আস্তে মিঃ তুষার রিকভারি করছে ( ডাক্তার বলেন)
এই কথাতে সবাই খুব আনন্দিত হয়।
__ কিন্তু উনি সবাইকে হয়তো চিনতে পারবেন না ( ডাক্তার)
আনন্দের হাসি টা দমে গেলো। এতো দিনের আশা আর পুরণ হলোনা।
,
,
তৃণাকে সাইফ ফোন দেয়
__ এখন কি করছো ম্যাডাম, সকাল থেকে খোঁজ নাই কেনো। ( সাইফ)
__ কি ভাবে খোঁজ নিতাম, ( তৃণা)
__ বাহহ! ভুলেই গেছো ( সাইফ)
__ তা নয়, বাবার জ্ঞান ফিরেছিলো কিন্তু ডাক্তার সাহেব বলেছে কাউকে চিনতে পারবেনা। ( তৃণা)
__ সে যে তোমাদের মাঝে আছে এটার জন্যই শুকরিয়া করা উচিৎ তাই না ( সাইফ)
__ জ্বী, আমি শুধুশুধু ওভার রিয়েক্ট করি। ( তৃণা)
__ তা ম্যাডাম সামনে তো এক্সাম পড়াশোনা তো করোনি নিশ্চয়ই। ( সাইফ)
__ এতোসব ঝামেলা তে ক্লাস ঠিকমতো করতে পারিনি। তাইই ( তৃণা)
__ আজ থেকে কথা কম শুধু পড়াশোনা হবে। ( সাইফ)
সাইফ তৃণা কে পড়াতে থাকে, এতে তৃণার জন্য বেশ ভালো হয়। সাইফ অনেক ভালো বুঝাতে পারে।
,
,
নিরা আবিরকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইলেও আবির সব সময় নিরার পাশে থাকার চেষ্টা করে। তাই নিরার পরীক্ষার জন্য আবির নিজ থেকে অনেক হেল্প করে। এতে নিরার ভালো লাগ্লেও মনের মাঝে পুষে রাখা রাগ থেকে আবির কে দূরে রাখে।
এতো কিছু না ভেবে নিরা আবির কে বলে দেয়
__ এবার সাইফের সাথে কথা বলা উচিৎ ( নিরা)
__ কোন সাইফ ( আবির)
__ কেনো ভুলে গেলে? তৃণার ডাক্তার ( নিরা)
__ কি ব্যাপারে কথা বলবো বলো? ( আবির)
__ তৃণার সাথে সাইফের বিয়ের ব্যাপারে। ( নিরা)
__ তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? ( আবির)
__ এখানে পাগল হবার কি হয়েছে শুনি। ( নিরা)
__ এ বিয়ে কিছুতেই সম্ভব নয়। কারণ……….. ( আবির)
চলবে…….
https://banglapremergolpo.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8b%e0%a6%a7-%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a7%a7%e0%a7%ab/