আবির খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে নিরাকে ডাক দেয়, নিরা সাড়া দেয় না দেখে নিরার ঘুমন্ত কপালে কিস করে আবির আর তখনই নিরা টের পেয়ে যায়।
__ দেখুন, এইসব আমি পছন্দ করিনা তা কি জানেন না?
__ জানি তো , কি করবো বলো?
__ যান বাইরে যান, আর আসবেন না এখানে।
__ আচ্ছা একটা কথা তো বলো? তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?
__ আমাকে কি বাজারের মেয়ে মনে হয় যে আমি কাউকে ভালোবাসবো?
__ আমি এসব মিন করে বলিনি, ভুল বুঝছো।
__ আপনারা ছেলেরা ভাবেন কোন মেয়ে আপনাকে ইগনোর করলে তার প্রেম আছে। অথচ এটা ভাবেন না ইগনোর করার পিছনে দায়ী আপনারা নিজেরাই।
__ হ্যাঁ! তা জানি, আমার দোষ এর জন্যই তুমি হয়তো কখনো ক্ষমা করতেও পারবেনা।
__ জ্বী হ্যাঁ, সেটাই।
__ আজ একটু মিশির চেম্বার এ যেতে হবে তোমাকে ।
__ কেনো, আমি কি অসুস্থ?
__ হুম, সেদিন মিশি যেটা বলেছে সেটা টেস্ট করে দেখতে হবে।
__ কবে কি বলেছে
__ আরে, বাদ দাও৷
গেলেই সব জানতে পারবে।
__ ওকে দিলাম বাদ, কিন্তু পরে যদি উল্টো পাল্টা কিছু শুনি তো আপনাকে কখনো ক্ষমা করবোনা।
আবির মিশির চেম্বারে গিয়ে নিরা কে পরীক্ষা করায়। যেদিন রেপ হয়েছিলো নিরা, সেদিন ই প্রেগন্যান্সির টেস্ট টা করিয়ে নিতে বলেছিলো মিশি। তাই আবির এর খারাপ লাগ্লেও নিরাকে নিয়ে আসে আজ। রেজাল্ট যাই হোক মেনে নিতেই হবে। সেদিন সন্ধ্যায় রেজাল্ট আনতে আবির একা যায়। কারণ নিরাকে সে এটা বলতে পারবেনা খুব সহজে। আর টেস্ট এর রেজাল্ট পজিটিভ দেখে হাসবে কি কাঁদবে তা বুঝতে পারেনা আবির। নিরা এই কথা জানলে তার খবর খারাপ করে দিবে।
তাই আবির ডিসিশন নেয় বিয়ের অনুষ্ঠান এর পরই নিরাকে এই খবর দিবে।
রেজাল্ট নিয়ে আলমারি তে লুকিয়ে রাখে আবির। পরের দিন বিয়ের অনুষ্ঠান তাই আবিরের বাবা মা সবাই আসে আবারো। আত্মীয়রা একেবারেই কমিনিউটি সেন্টারে আসবে, আবিরের বউ দেখতে।
আবিরের বাবা মাও নিশ্চিত আছে, বিয়ের মূল নাটক দেখবে বলে। নিরাকে তাদের একদমই পছন্দ না। ক্ষেত মেয়ে, আবিরের মায়ের ভাষায়। সব সময় শাড়ি পরে নিরা, যা এই যুগের সাথে বেমানান। অথচ তৃণা কতো ই না আধুনিক। অনন্যাও বেশ ছিলো কিন্তু তৃণাকেই তাদের বেশি ভালো লেগেছে। তার থেকেও বড় কথা তৃণার বাবা বিজনেসম্যান। সমাজে তার স্ট্যাটাস ও অনেক বেশি।
তৃণা যে পার্লারে নিরাকে সাজানোর কথা সেখানে গিয়ে চুপ করে বসে থাকে। দুপুরের দিকেই নিরাকে পার্লারে নিয়ে যায় আবির। আবিরকেও রেডি হতে হবে তাই ড্রাইভার এর উপর নিরাকে আনার দায়িত্ব দিয়ে আবির চলে আসে।
পার্লারের ভিতরে তৃণাকে দেখে নিরা চমকিয়ে যায়।
__ কি ব্যাপার তুমি এইখানে কি করছো? ( নিরা)
__ এইখানে তো তোমার আসার কথা ছিলো না, আসার তো কথা ছিলো আমার, তা এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে। ( তৃণা)
__ মানে, কি বলছো এইসব?
__ আবির স্যার কে পাবার জন্য এতো নাটক করলাম, আর তার সুযোগ নিলে তুমি তাই না। এর প্রতিশোধ আমি নিয়েই ছাড়বো । তোমাকে ভালো ই ভালো ই বলছি আজ থেকে তুমি তৃণা হয়ে আমার বাবার সাথে থাকবে। আর আমি নিরা হয়ে আবিরের সাথে থাকবো। মেনে নিতে কি রাজি আছো?
__ তোমার জন্য মিঃ আবির আমার ক্ষতি করেছে। তোমার মিথ্যা নাটকের বাস্তবতা আমাকে দেখিয়েছে আবির। আর আমি আবিরকে ছেড়ে দিবো। তা স্বপ্নেও ভেবো না, আবিরকে প্রতি মুহুর্তে কষ্ট দেয়ার জন্য নিরাই যথেষ্ট।
__ তা ভুলে যাও, এখন তুমি আর টিকতে পারবে না।
পার্লারে সব ব্যবস্থা করেই রেখেছি। বলেই তৃণার বডি গার্ড রা নিরা কে মুখ বেধে তৃণার বাসায় নিয়ে যায়। আর তৃণা আবিরের বউ সেজে আবিরের গাড়িতে করে বিয়ের অনুষ্ঠান এ যায়।
তৃণা প্রথমে অনুষ্ঠানে ঢুকেই আবিরের বাবা কে আর মা কে আলাদা আলাদা ভাবে চোখ টিপ দেয় বুঝিয়ে দেয় সে তৃণা। আবির সেটা খেয়াল করে নেয় কিন্তু বুঝতে পারেনা কিছুই।
বছরের প্রথম দিন, সাথে আবিরের বিয়ে, সেই হৈচৈ চারিদিকে। একে একে সবাই তৃণাকে নিরা ভেবে অভিনন্দন জানাচ্ছে।
মিশি : হ্যালো নিরা, কেমন আছো? এই সময় শরীরের যত্ন নিও বেশি করে।
__ এই সময় মানে? ( তৃণা)
__ আরে আবির তোমাকে কিছুই বলেনি নাকি? ( মিশি)
__ তৃণা ভয় পেয়ে যায়, কি বলতে চাচ্ছেন উনি, ধরা পড়ে যাবে না তো, এইসব ভয় ভিতরে ঢুকে যায়।
আবির : আহ! মিশি , কি শুরু করলি তুই বলতো। এখনো সে কিছুই জানেনা, আজ বলবো।
( তৃণা একটু স্বস্তি পেলো)
মিশি : ওহহ তাই নাকি, ওকে বাবু 🙃🙃
নিরার মা এসে তৃণার কে জড়িয়ে ধরে এতে তৃণা চিনতে না পেরে বলে
__ কে আপনি? আজব তো আমার সাজ নষ্ট হয়ে গেলো। ( তৃণা)
__ কি বলছিস মা তুই? নিজের মা কে তুই ভুলে গেলি?
__ সরি মা! আসলে তোমার মুখ দেখিনি, তাই ভুলভাল বলে ফেলেছে। ক্ষমা করে দিও ( মনে মনে উহহ! এই মহিলা যে এমন করবে কে জানতো । আমি তো ধরাই পড়ে যাচ্ছিলাম)
আবির এইসব ঘটনাতে বেশ সন্দেহ করে ফেলে তৃণাকে। কিন্তু কিছুই বলেনা, মনে মনে বলে, নিরা তো এমন ছিলো না। তাহলে কি এই মেয়ে নিরা নয়। অবশ্য নিরার চোখের ভাষা আমি বুঝি। এটা তো নিরার চোখ মনে হচ্ছেনা, নাকি সাজানোর জন্য এমন লাগছে। নাহ মাথা কাজ করছে না। পরে দেখা যাবে, আচ্ছা যদি এইটা নিরা না হয় তাহলে নিরা কোথায়? আর চিন্তা করতে ভালো লাগছে না আবিরের।
__ ( আবিরের মা) আবির ডার্লিং! এতো কিসের টেনশন করছো তুমি।
__ না তো মম! নিজের পছন্দ মতো সুন্দরী বউ পেয়েছি, কিসের টেনশন করবো আমি। [ আবির]
__ তাই তো কথা, এতো সুন্দর বউ থাকতে আর কিছু লাগে নাকি? ( আবিরের বাবা)
__ হ্যাঁ ড্যাড, ঠিকিই বলেছো।
সবাই অনেক রকমের গিফট এনেছে। খাচ্ছে, আবিরের নাম করছে। ফটোশুট, ভিডিও সব শেষ করে রাত ১২ টার দিকে তারা সবাই বাসায় চলে আসে।
,
,
,
তৃণার বাবা নিরাকে দেখে বেশ অবাক হয়। একেবারে তৃণার মতো দেখতে।
__ আচ্ছা এটা কিভাবে সম্ভব মিসেস আবির। তুমি তো পুরাই তৃণার মতো দেখতে।
__ এটাই তো আমার জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে মিঃ।
__ কিন্তু কিভাবে সম্ভব সেটা বলতো?
__ এটা আপনি ভালো করে জানবেন, আমার তো জানার কথা নয়।
__ আমি কি জানবো? ( তৃণার বাবা)
__ তা আমি জানিনা। যাই হোক আমাকে এখানে তুলে এনে কি আপনি ভালো কাজ করেছেন?
__ আমি আমার মেয়ের চোখের জল দেখতে পারিনা।
__ ওহহহ তাইনা, আবির আমায় ভালোবাসে, আর সে তৃণাকে খুব শীঘ্রই ধরে ফেলবে।
__ চিনতেই পারবে না, হা হা হা ( তৃণার বাবা)
__ তা কয়দিন পরেই বুঝতে পারবেন।
__ যাও উপরে তৃণার ঘরে গিয়ে থাকো। ( সাইরা সাইরা বলে সাইরা কে ডাকে)
__ জ্বী আংকেল ( সাইরা)
__ আজ থেকে নিরা কে তৃণা মনে করে তাকে নিয়ে থাকবে? আর বডিগার্ড তো আছেই পালাতে পারবেনা। ( তৃণার বাবা)
__ জ্বী, এসো বলেই নিরাকে ধরে নিয়ে যায়।
__ সাইরা ছাড়ো , খুব শীঘ্রই তোমাদের জেলে পাঠিয়ে ছাড়বো দেখে নিও। ( নিরা)
নিরা এতো দিন না বুঝলেও এখন বুঝতে পারছে সে আবির কে ভালোবেসে ফেলেছে। খুব কস্ট হচ্ছে নিরার কিন্তু এখান থেকে কিভাবে পালাবে তার প্লান করতে থাকে।
চলবে…..