মায়ের জীবনের গল্প শুনে দুই মেয়ের চোখে জল ছিলো। নিরা মায়ের কাছ থেকে উঠে গিয়ে বাবা বলে জড়িয়ে ধরে তুষার কে।
__ আমাকে ক্ষমা করে দিও, এতো দিন নিজের আরেক মেয়েকে আদর দিই নি তাই। ( তুষার নিরাকে বলে)
__ ড্যাডি, আমি যে আমার বাবা কে ফিরে পেয়েছি এটাই অনেক। ( নিরা)
__ আর আমার বাবা না বুঝি? ( তৃণা)
__ “তৃণা আমায় যখন তোমার কথা বলেছিলো তখনই বুঝেছিলাম তুমি জমজ বিধায় একই রকম হয়েছো। কিন্তু যখন তৃণা তোমার বর কে চায় তখন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম যে দুইটা মেয়ের সব পছন্দ একই কেনো হলো। এরপর আর দেরি না করেই চলে আসি তৃণার কাছে। আবির সম্পর্কে সব খোঁজ নিই, আগে আবিরের মম ড্যাডের সাথে দেখা করে তাদের সব খুলে বলি। এরপর তৃণাকে খুশি করতে আবির এর কাছে তৃণাকে জেতে দিলেও সব ঘটনা আবির কে খুলে বলি বিয়ের অনুষ্ঠান এর দিন রাত্রেই । তাই আবির খুব একটা টেনশন করেনি তোমাকে নিয়ে। ” নিরাকে এই কথা গুলি বলেই তৃণাকে বলে ” আমাকে ক্ষমা করিও, আমি চাইনি তুমি তোমার বোনের স্বামী কে ভালোবাসো। যাই হোক নিজের ভুল বুঝতে পেরেছো এটাই অনেক। “
__ সরি বাবা, মাফ করে দিও বোন। ( তৃণা দুইজনকেই বলে)
অনেক রাত হওয়াতে দুই বোন গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে এক বেডে ই। আরেকটা বেডে তুষার আর হেনা বসে গল্প করতে করতে সকাল হয়ে আসে সেই খেয়াল নেই তাদের। পুরানো ভালোবাসা যেন ফিরে এসেছে, সব ভুল বুঝাবুঝি দূর হয়ে গেছে যেন। হেনা কথা বলতে বলতে তুষার এর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। আর তুষার ও পুরনো ভালোবাসার মানুষ এর মাথায় হাত রেখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো।৷
দরজা লক করা ছিলো না তখন ই মাসুদ এসে মা কে অন্যলোক এর কাঁধে মাথা রাখতে দেখে রাগান্বিত হয়ে যায়।
__ বাহবাহ! আহহ! কি প্রেম, আমি আগে জানতাম না আমার মা চরিত্রহীনা। ( হেনার ছেলে মাসুদ)
হেনার ঘুম ভেঙে যায়, নিরা তৃণাও এক সাথেই জেগে উঠে । সবাই শুনতে পায় মাসুদ এর জঘন্য কথা টা। এটা শুনেই হেনার চোখে পানি চলে আসে।
__ তুমি না জেনে মা কে দোষ দিতে পারোনা ভাই। ( নিরা)
মাসুদ কখনো নিরাকে সহ্য করতে পারতো না। আর আজ তো আরোই সহ্য হচ্ছেনা ।
__ তুই চুপ থাক, নিজের মাকে একটা লোকের পাশে দেখে তোর খারাপ না লাগতে পারে আমার ঘৃণা হচ্ছে। ( মাসুদ)
__ ওই লোকটাই আমার বাবা। আর আমার মা ও কোন দোষ করেনি। ( নিরা)
__ আরেহ বাহ! একটা অচেনা লোক এখন তোর বাপ হয়ে গেলো । কি ক্যারেক্টার তোদের মা মেয়ের ( মাসুদ)
__ তোমার চরিত্র দেখি তোমার বাবার মতো ই হয়েছে। না বুঝেই অন্যকে দোষারোপ করছো? ( নিরা)
__ এই চুপ করো তোমরা, এটা হাসপাতাল, এখানে এমন করতে নেই।
বাবা মাসুদ তোমার সাথে জরুরী কিছু কথা আছে। বাইরে এসো সব বুঝিয়ে বলছি। ( তুষার)
__ এই লোক আপনি চুপ থাকেন,
এরপর নিজের মা কে বলে, আর আপনার মতো মহান মা কে যেন আমাদের বাড়িতে আর না দেখি। ( মাসুদ)
এটা বলেই মাসুদ বের হয়ে চলে যায় ওদের কেবিন থেকে।
হেনা এইসব শুনে প্রচুর কান্না করে, এরপর তৃণা মাকে কে জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদে। তৃণা খুব জেদী ছিলো আর এইসব দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছেনা। একটু অস্বাভাবিক আচরণ বেড়েই চলেছে তৃণার।
তৃণা বাবার সাথে জেদ ধরে মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে, হাসপাতালে আর থাকবেনা সে। তাই তুষার সব বিল মিটিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আবির কেও জানিয়ে দেয় তুষার, দুই বোন আজকের দিন একসাথে থাকতে চেয়েছে। তাই আবির আর নিরাকে নিতে যায় না, শুধু ফোন করে নিরা কে।
__ হ্যালো, মাই ডিয়ার ওয়াইফ। বাবা মা আর বোন কে পেয়ে মনে হয় আমায় ভুলেই গেলে।
__ কি যে বলেন না আপনি, আপনাকে ভুলি কেমন করে। তবে ( কথা গুলি মন খারাপ করে বলে নিরা)
__ কি ব্যাপার এতো মন খারাপ কিসের জন্য? ( আবির)
__ আপনি কেনো যানি সব কিছুই আগে আগে বুঝে ফেলেন। ( নিরা)
__ তোমার মতো তো আর পঁচা নই, ভালোবাসি তোমাকে, বুঝতে হবে। যাই হোক কি হয়েছে বলো? ( আবির)
__ নিরা ভাইয়ের কথা খুলে বলে আবির কে। এরই মাঝে তৃণা এসে ফোনের কাছে মুখ নিয়ে বলে, সরি দুলাভাই, আপনার থেকে আপনার বউকে ছিনিয়ে আনা উচিৎ হয়নি। খুব মিস করছেন বুঝি বউকে?
তিন জনই হেসে উঠে এই কথাতে।
এদিকে বাসায় সবাইকে নামিয়ে দিয়েই তুষার কি যেনো কাজে গেছে। তাই হেনা দুই মেয়ে আর সাইরার সাথে গল্প করছেন। আর এদিকে মাসুদ মনে মনে খুবিই রেগে আছে। বাবার পাসে গিয়ে বলে প্রতিজ্ঞা করে, মায়ের এমন প্রতারণার প্রতিশোধ সে নিবেই।
তুষার নিজের ভুলের জন্য কিছু কাজ করে কোর্ট এ গিয়ে। বাসায় এসে একটা চিঠি লিখে মাসুদের নামে। সেটা আবার পাঠানোর ব্যবস্থা করে এসে খাওয়া শেষ এ ঘুমিয়ে পড়ে।
এক দিন নিরা মা আর বোনের কাছে থাকার পর আবির এসে নিরা কে নিয়ে যায়। তৃণা আর ওর মা থাকে আর সাইরা আছে। তিনজন বসে গল্প করছিলো এইসময় একটা খারাপ নিউজ আসে বাসায়। এতে তৃণা আর হেনা দুইজনেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যায় দুইজন, ঐদিকে নিরা আর আবির কেও ফোন দিয়ে জানায় খারাপ সংবাদ টার কথা। নিরা এটা শুনে খুব কষ্ট পায় আর তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ছুটে যায় আবির কে সহ।
মাসুদের কাছে চিঠি আসে, ঠিকানা নাই তাও সে সেটা খুলে পড়তে শুরু করে। তুষার মাসুদ কে সব কিছু জানিয়ে দেয় সেই চিঠি তে। এমনকি তুষার এর জন্য মাহমুদ এর যতটা সম্পত্তি লস হয়েছে সেগুলোর সম পরিমাণ সম্পত্তি মাসুদের নামে লিখে দেয় তুষার।
মাসুদ সব কিছু পড়ে নিজের ভুল বুঝতে পারে। কিন্তু ততোক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে তার, ক্ষমা চাওয়ার ও আর সুযোগ নেই মাসুদের। কি করবে বুঝতে না পেরে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে মাসুদ।
( রহস্য টা কালকের জন্যই রেখে দিলাম, কাল আরেকটা ভাইবা পরীক্ষা আছে। কাল সন্ধ্যায় বড় করে লিখে গল্প পোষ্ট দিবো। আগামী পার্টে গল্পে নতুন কিছু আসছে, তাই ধৈর্য ধরে কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন সবাই।)
চলবে…….
https://banglapremergolpo.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8b%e0%a6%a7-%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a7%a7%e0%a7%a9/