“তোর চুমু খাওয়ার জিনিস দেখা যায় তুসি! রিয়ার কথায় তুসি সামনের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই তুসির হৃদস্পন্দনের গতিবেগ বেড়ে যায়। কত গুলো প্রহর অপেক্ষা করেছে এই মানুষটাকে একটা নজর দেখার জন্য। কিন্তু পরাণের হাতে সিগারেট দেখেই তুসির মস্তিষ্ক টগবগ করে উঠল৷ সে রাস্তার মাঝখানে দিয়ে উন্মাদের মতো পরাণের কাছে ছুটে গেল। পরাণ সিগারেটটা ঠোঁটে চেপে ধরবে। এমন সময় তুসি সিগারেটটা কেঁড়ে নিয়ে সিগারেটের জলন্ত আগুন পরাণের ঠোঁটে চেপে ধরলো। আকষ্মিক ঘটনায় পরাণ রেগে সামনে থাকা ব্যক্তিকে কিছু বলতে যাবে। তখনই তার সমস্ত ধরনী থেমে যায়। রক্তিম চোখে তুসি পরাণের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। দোকানী এসে পরাণকে বলল,
“এই নাও বাবা তোমার চা। তুসি চা টা পরাণের ডান হাতে ফেলে দিল। পরাণ ব্যথায় কুঁকড়িয়ে উঠল। তুসি সত্যিই তার সামনে আছি কি না৷ সেটা দেখার জন্য ব্যথাকে উপেক্ষা করে একা হাতে তুসির গাল স্পর্শ করল। সাথে সাথে তুসি ঝাড়া দিয়ে হাত সরিয়ে দিল। পরাণ উপলব্ধি করতে পারছে এটা তার ভ্রম নয়৷ তুসি সত্যি সত্যি তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পরাণের আঁখি যুগল টলমল করছে। গভীর আলিঙ্গনে তুসিকে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তুসিকে ছুঁইয়ে দেওয়ার অধিকার এখনো তার হয়নি। আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পরাণকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল,
“তোমার এতটা অধঃপতন হয়ে গেছে পরান ভাই! তোমাকে আমি কি বলেছিলাম? তুমি আমার ইচ্ছের মূল্য দিলে না। টাকা পয়সা হয়ে গেলে মানুষ বুঝি এভাবেই বদলে যায়। আমারই ভুল হয়েছে মামনির সাথে চুক্তি করেছিলাম। তোমার সাথে প্রেমের অভিনয় করব। তারপর তোমাকে দেশে আসতে বাধ্য করব।প্রেমের অভিনয় করতে গিয়ে কখন যে তা ভালোবাসায় পরিনত হয়ে গেল। সেটা ঘুনাক্ষরেও টের পেলাম না। আমি অভিনয় করতে গিয়ে ভালোবাসার কাছে হেরে গেলাম। আর তুমি সব সত্যিটা শুনে বদলে গেলে, একটা বার আমায় বোঝার চেষ্টা করলে না। জানতে চাইলে না আমি বেঁচে আছি নাকি মরে গিয়েছি। তোমরা ছেলেরা এমনই হও জানো আমারই ভুল। আমি তো তোমাদের বাড়ির আশ্রিতা ছিলাম৷ যার কোনো টাকা পয়সা নেই। সেই মেয়েকে কেন তোমার মতো টাকা পয়সা আলা ছেলে বিয়ে করবে। তোমাকে বলেছিলাম। আমি তোমার হই বা না হই তুমি তোমার ঠোঁটটাকে আগলে রেখো। সেটা আমার ভিষণ প্রিয়৷ কিন্তু তুমি কি করলে নিকোটিন দিয়ে ঠোঁট টাকে ধংস করে দিচ্ছ। আমি ভুল কিছু বলে থাকলে মাফ করে দিবে। আমি তো আর তোমার বউ না যে তোমার ওপরে এত অধিকার দেখাব। এখনো ঠোঁটটা সতেজ আছে নষ্ট হতে দিও না। আমার তোমার ওপরে আর কোনো অধিকার নেই। কিন্তু তুমি আমার পছন্দের জিনিস নষ্ট করে দিয়েছ। দেখেই আমার সমস্ত শরীর জ্বলে যাচ্ছে। কথা গুলো বলেই দু’হাতে পরাণের চুলগুলো টেনে ধরল। পরাণ মুখ দিয়ে একটা শব্দ ও বের করছে না। তা দেখে রিয়ার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
“তুসি ছাড় আমাদের বাসায় যেতে হবে। তোর জন্য মার খেতে পারব না। রিয়ার কথায় পরাণ তুসির হাত নিজের হাতের মধ্যে পুড়ে নিল। রাগান্বিত হয়ে বলল,
“আমার তুসি আপনার সাথে যাবে না।
“আমি কেন যাব না। তোমার মা আমাকে দুই লক্ষ টাকা দিয়ে তাদের বাড়ির কাজের লোক হিসেবে বেচে দিয়েছে। তাদের টাকা এতটা সস্তা এসে গিয়েছি নাকি৷ আমি তোমার সাথে যাব না।
” আমার তুসিও এতটা সস্তা এসে যায়নি। তাদের দুই লক্ষ টাকা আমি ফিরিয়ে দিব। তারা যেন এসে টাকা গুলো আমার থেকে বুঝে নিয়ে যায়।
“তোমার মায়ের অভিশাপ নিয়ে সারাজীবন পার করতে পারব না। তোমাদের বাসার লবন খেয়েছি। তোমার মাকে কষ্ট দিয়ে ঐ বাড়িতে ফিরে যেতে চাই না।
“বেশি কথা বললে তুই ঠোঁটে চুমু খাওয়ার আগে আমি এখনই রাস্তায় দাঁড়িয়ে তোর ঠোঁটে চুমু খাব বুঝতে পেরেছিস। তুসির চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেল। তার পরাণ ভাই এমন কথা বলতে পারে৷ এটা তার ধারনার বাহিরে ছিল। তুসিকে অবাক করে দিয়ে পরাণ তুসিকে কোলে তুলে নিল৷ একটা গাড়ি ডেকে উঠে বসলো। রিয়া হা হয়ে তাকিয়ে আছে। সে একটু ভয়ও পাচ্ছে কিন্তু আনন্দ লাগছে। কত সাধ্য সাধনা করে পরাণের কাছে তুসিকে নিয়ে আসতে হয়েছে। দু’টি প্রেমিক যুগলকে এক করতে পেরেছে৷ এতেই তার শান্তি। রিয়া বাসায় চলে গেল। তুসি ছটফট করছে পরাণ রক্তিম চোখে তাকালো। পরাণের দৃষ্টি দেখে সমস্ত তেজ নেতিয়ে গেল তুসির। পরাণ বাসায় আসতেই রেহেনা এগিয়ে আসলো।
“তুসি তুই আমাকে মাফ করে দিস। আমার জন্য আমার ছেলেটা অনেক কষ্ট পেয়েছে। আমি বুঝেছি তুই আমার ছেলের সুখশান্তি। আমি চাই তুই আমার ছেলেকে আগের মতো করে দে। আমার ছেলের বউ হবি তুসি? এমন আদুরে কথায় তুসির ভিষণ কান্না পেল। সে মাথা নুইয়ে কান্না করছে। রেহেনা তুসিকে বুকে আগলে নিয়ে বলল,
“আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি৷ তোকে অনেক খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি। তুসি নাক টেনে বলল,
“ওরা বাসা বদলেছে মামনি।
“আমি তোকে পরাণের বউ বানাতে চাই৷ তুই আমার ছেলের বউ হবি?
“তুমি মন থেকে বললে হব।
“বিকেলেই ঘরোয়া ভাবে তোদের বিয়ে হবে। এখন গিয়ে বিশ্রাম কর। আমি তাদের টাকা তাদের ফিরিয়ে দিয়ে এসেছি। রিয়া আমাকে সাহায্য না করলে এতকিছু করতে পারতাম না। তুসি মনে মনে বিয়াকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল।
পরাণ বিদেশ থেকে তুসির জন্য লাল টুকটুকে শাড়ি নিয়ে এসেছিল। সাথে অনেক গুলো গহনা। সেগুলো পড়েই তুসি কবুল বলে পরাণকে নিজের স্বামী হিসেবে গ্রহণ করল। বাড়িতে আজ আনন্দের মেলা বসেছে। বিনুও তুসির থেকে মাফ চেয়েছে। মাফ করাতেও অদ্ভুত এক শান্তি আছে। যে শান্তি তুসি অনুভব করতে পারছে। সময়ের সাথে রাত গভীর হতে শুরু করেছে। তুসিকে পরাণের ঘরে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাত বারোটায় পরান নিজের ঘরে আসলো। তুসির পাশে বসে বলল,
“আমাকে যে এত এত কষ্ট দিলি। এখন তোর কি শাস্তি হওয়া উচিত বল। ভেবেছি এসেই তোকে দেখব। আমার ঘরের বউ বানাব। তুই আমার ঠোঁটে চুমু খাবি। সবকিছু এক নিমিষেই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিলি। তুসির কোনো কথা না বলে রাগান্বিত হয়ে শুয়ে পড়লো। পরাণ বিছানায় উঠে বসলো। তুসির হাতে হাত রাখতেই তুসি হাত সরিয়ে দিল। পরাণ তুসিকে টেনে তুলল। তুসি হাত সরাতে গিয়ে আচমকা পরাণের গালে থাপ্পড় বসে গেল। আকষ্মিক ঘটনায় তুসি চোখ বড় বড় করে পরাণের দিকে দৃষ্টিপাত করল। পরাণ অভিমানী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুসির দিকে। সে নিজ থেকেই হাত সরিয়ে নিল। তারপরে নিঃশব্দে শুয়ে পড়লো। তুসির ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সে কিভাবে তার পরাণ ভাইকে আঘাত করল। মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার। সে-ও পরাণের বিপরীতে পাশে শুয়ে পড়লো। একটু পরে আদুরে বিড়ালের মতো পরাণকে জড়িয়ে দিয়ে নিঃশব্দে কান্না করতে লাগলো। পরাণ হাত সরিয়ে দিতে চাইলে তুসি আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো। পরাণ বিরক্ত হয়ে বলল,
“এতক্ষণ আঘাত দিয়ে মরা কান্না জুড়েছিস। জানিস না তোর কষ্ট আমার সহ্য হয় না। আমি ভেতর থেকে শেষ হয়ে যাই।
” আমাকে মাফ করে দাও পরাণ ভাই। আমি তোমাকে মারতে চাইনি। তুমি সিগারেট খাও এটা আমি মেনেই নিতে পারিনি। কেন জানি খুব রাগ হচ্ছে সাথে বিরক্ত হচ্ছি।
“চুমু খাওয়ার মানুষ না থাকলে সিগারেট খেয়েই শান্ত থাকতে হয়।
“তাহলে আমি কি মরে গিয়েছি। কালকেই চলে যাব। তুমি আর আমাকে আগের মতো ভালোবাসো না। কথা গুলো বলেই তুসি সরে যাচ্ছিল। পরাণ তড়িৎ গতিতে সামনের দিকে ঘুরে তুসিকে বুকের শান্তি মিলিয়ে নিল।
“তুই নিয়মিত চুমু খেলে আর সিগারেট খাব না।
“যে ঠোঁটে সিগারেট খেয়েছ। সেই ঠোঁটে আমি জীবনে ও চুমু খাব না।
“চুমুর লোভ দেখিয়ে আমাকে বিদেশ থেকে দেশে নিয়ে এসেছিস। আমি তো চুমু খাবই। কথা গুলো বলেই তুসির ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল পরাণ।
“তোকে অনেক ভালোবাসি তুসি। তুই আমায় রেখে চলে গেলে আমার মৃত্যু নিশ্চিত বাঁচতে পারব না। যে ঠোঁটে তোর ছোঁয়া পেয়েছি। সেই ঠোঁটে আর কোনোদিন মাদক উঠবে না কথা দিলাম৷ তুই শুধু আমাকে ছেড়ে যাস না।
“আমি ছেড়েও যাব না। সিগারেট ও খেতে দিব না। তোমার ঠোঁট শুধু আমার চুমুও শুধু আমি খাব। কথা গুলো বলেই পরাণের ঠোঁটে চুমু খেল। পরাণ তুসিকে নিজের বুকের মধ্যে শক্তি করে জড়িয়ে ধরলো। কত সাধ্য সাধনা করে দু’টি প্রেমিক হৃদয় এক হলো। সেখানে আছে শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা। তাদের ভালোবাসা দেখে চন্দ্র ও লজ্জায় মুখ লুকিয়ে ফেলল।
(সমাপ্ত)