১৮+এলার্ট
“ঠোঁটে চুমু খেতে টাকা লাগে পরাণ ভাই? যদি টাকা লাগে তাহলে আমাকে বলতে পারো। আমি টাকা দিয়েই তোমার ঠোঁটে চুমু খাব। মেসেজ টার দিকে নজর পড়তেই পরাণের আঁখিযুগল অশ্রুতে ভরে আসলো। তুসির শেষ মেসেজটা এটাই ছিল। পড়াশোনার ক্ষতি হবে সে কথা বলে, তুসি ফেসবুক চালানো বন্ধ করেছে ছয় মাস হলো। তুসির ভালোর কথা ভেবেই তো সে তুসির সাথে ফোনে মেসেজে কথা বলছে। তুসি তাকে শর্ত দিয়েছিল। ছয় মাস পরে এসে তাকে যেন সে সামনে থেকে দেখে, এর আগে যেন ভিডিও কলের কথা মুখেও না নিয়ে আসে। তুসির খুশির জন্য সব শর্তে রাজি হয়ে যায় পরাণ। প্রিয় মানুষটার সাথে রোজ নিয়ম করে কথা বলতে পারছে। এটাই তার কাছে অনেক ছিল। কিন্তু সে কি জানতো। এই ভালোবাসার পেছনে নিকৃষ্ট রহস্য লুকিয়ে ছিল। পরাণের আঁখিযুগল ঝাপসা হয়ে আসতে শুরু করল। কয়েক ফোঁটা অশ্রু ফোনের স্ক্রিনে পড়লো। পরান ফোনটা মুছে উপরের দিকে যেতে থাকলো। একটু ওপরে গিয়ে থামলো ঝাপসা চোখে পড়তে লাগলো। তাতে লিখা আছে,
“তোমার ঠোঁটের অনেক যত্ন নিবে পরাণ ভাই।
“কেনো?
“কারন আমি তোমার ঠোঁটে চুমু খাব তাই।
“আমার ঠোঁট কি তোর বাপ দাদা সম্পত্তি? যে তুই আমার ঠোঁটের ওপরে এত অধিকার দেখাস?
“ওটা নামেই তোমার ঠোঁট কিন্তু কাজে ওটা আসলে আমার জিনিস। ওখানে চুমু খাওয়ার অধিকার শুধু আমারই আছে বুঝেছ? তুমি তো জানো তুসি তার জিনিস কতটা যত্ন করে রাখে, তুমি তুসির জিনিস যত্ন করে রাখবে। নিয়মিত ঠোঁটের যত্ন নিবে। আমার থেকে তোমার ঠোঁট বেশি সুন্দর বলে ভাব নেওয়ার কিছু নেই। কারন তোমার মানেই আমার।
“আমি সিগারেট খেয়ে আমার ঠোঁট দু’টো কালো কুচকুচে বানিয়ে ফেলব। তখন বেশি করে চুমু খাস।
“খবরদার পরাণ ভাই। এসব কথা মুখেও আনবে না। তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। তোমার ঠোঁটে চুমু খাব বলে কতদিন ধরে না খেয়ে আছি। তুমি এভাবে আমার আহার নষ্ট করতে পারো না।
“থা’প্প’র দিয়ে তোর গা’ল একদম লাল করে দিব। এতটুকু মেয়ে চুমুর কি বুঝিস?
“বুঝিনা দেশে আসো খেয়ে দেখিয়ে দিব।
“তোর অত্যাচারে আমি দেশেই যাব না। এখন কি তুমি চুমু খাওয়ার জন্য বিদেশে চলে আসবি।
“দরকার পড়লে আমি বিদেশে গিয়েই তোমার ঠোঁটে চুমু খেয়ে আসব। কতদিন দিন ধরে প্রহর গুনছি। কবে তুমি দেশে আসবে। আমি শুনে শুনে তোমার ঠোঁটে একশো টা চুমু খাব। তুসির কথায় পরাণ রাগের ইমোজি দিয়েছিল। তুসি আর রিপ্লাই করেনি। পরাণের বুকটা ভারি হয়ে আসতে শুরু করেছে। দরজা নিচে বসে ফোনটা বুকে জড়িয়ে নিঃশব্দে কান্না করছে।
“ছেড়েই যদি যাবি। তাহলে এতটা মায়ায় বেঁধেছিলি কেন তুসি? দু-চোখ ভরে তোকে দেখবো জন্যই ছুটে এলাম দেশের মাটিতে। তোর সাথে কয়টা প্রহর শান্তিতে কাটাতে চেয়ে ছিলাম। তোর সাথে নির্ঘুম রজনী পার করতে চেয়ে ছিলাম। কোনো এক বৃষ্টি বিলাসে আমার ঠোঁটে তোর চুমু খাওয়ার কথা ছিল। তুই বলেছিলি আমি দেশে আসলে একশোটা চুমু খাবি। আমি তো দেশে এসেছি। তুই হারালি কই? আমার ভিষণ কষ্ট হচ্ছে রে তুসি। তুই আমার কাছে ফিরে আয় না। আমি তোর পছন্দের ঠোঁট নষ্ট করে দিব বলেছি। সেজন্য আমার ওপরে রাগ করেছিস। আরে পাগলি আমি তোকে রাগানোর জন্যই বলেছি। তুই ভাবতেও পারবি না। আমি নিজের থেকেও বেশি যত্ন নেই আমার ঠোঁটের। কেনো নেই জানিস? কারন আমার ঠোঁট তোর ভিষণ প্রিয়। আর আমার প্রিয় ছিলি তুই। তোর প্রিয় জিনিস তোর পরাণ ভাই কখনো নষ্ট করতে পারে। পৃথিবীর যে প্রান্তেই তুই থাকিস না কেন তুসি। আমি তোকে খুঁজে বের করবই। তোর পরাণ ভাইয়ের ওপরে তোর বিশ্বাস আছে তো তুসি?
পরের দিন সকাল থেকে পরাণ চোখ মেলে নিজেকে মাটিতে আবিষ্কার করল। কালকে তুসির কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে। সেদিকে তার খেয়াল নেই। মনটা ভিষণ বাজে ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মনটাকে সুস্থ করার জন্য নির্দিষ্ট মানুষটার প্রয়োজন। কিন্তু মানুষটাকে সে কোথায় পাবে। পরাণের দরজায় কেউ কড়া নাড়ছে। পরাণ উঠে দরজা খুলে দেখলো বিনু দাঁড়িয়ে আছে। ভাইয়ের করুন অবস্থা দেখে বিনু কলিজা কেঁপে উঠল। সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
“ভাইয়া কালকে ব্যাগ গুলো তুমি বাহিরে রেখে এসেছিলে। সবাই কত করে ডাকলো। তুমি দরজা খুললে না। তাই তোমার ব্যাগ গুলো রাখতে আসলাম। পরাণের মুখশ্রীতে তাচ্ছিল্য ফুটে উঠল। তাকে রক্তাক্ত করে দিয়ে, তার ব্যাগের চিন্তা করছে। হায় রে মানুষ! পরান গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“ঐ ছোট ব্যাগটা রেখে সব তোর মায়ের ঘরে নিয়ে যা। এসবের আমার কোনো প্রয়োজন নেই। কথা গুলো বলেই ব্যাগটা নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল পরাণ। গোসল করা প্রয়োজন সে ওয়াশরুম গিয়ে গোসল করে নিল। তারপরে ব্যাগটা যত্ন সহকারে তুলে রাখল। কেউ যেন ব্যাগটা খুলতে না পারে, সেজন্য তালা দিয়ে চাবি লুকিয়ে রাখল। প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে। কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছে না। মাথা যন্ত্রণা নিবারনের জন্য হলে-ও তাকে খেতে হবে। সে বাহিরে বের হয়ে গেল। তাকে দেখেই মাহবুব বললেন,
“তুই উঠেছিস বাজান। আমি তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। কতদিন তোর সাথে বসে খাওয়া হয় না৷ সকাল থেকে না খেয়ে তোর জন্য আসে আছি। পরাণ কোনো কথা না বলে খাবার টেবিল গিয়ে বসলো। কয়েকবার খেতেই আর খেতে ইচ্ছে করছে না। পেটে প্রচুর ক্ষুধা রয়েছে। কিন্তু গলা দিয়ে খাবার নামছে না৷ চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রুকণা ভাতের প্লেটে গিয়ে পড়লো। ছেলের অশ্রু মাহবুবের ভেতরটা রক্তাক্ত করে দিচ্ছে। সে কিছু বলতে যাবে। তার আগেই পরাণ হাত ধুয়ে উঠে গেল। বাহিরে আসতেই আশেপাশের মানুষ তাকে জেঁকে ধরলো। দীর্ঘসময় পর সবাই চলে যেতেই পাড়ার হেলাল চাচার দোকানে গিয়ে বসলো।
“চাচা আমাকে এক কাপ চা দিবেন।
“পরাণ বাবা কবে আসলে ভালো আছ তুমি?
“আলহামদুলিল্লাহ চাচা ভালো আছি।
“বিদেশে ভালোমন্দ খেতে পাওনি তুমি। চোখ মুখ এত শুকনো লাগছে কেন?
“পেয়েছি চাচা অনেক দূর থেকে এসেছি। ঘুমিয়েছি কম সেজন্য হয়তো দেখতে এমন লাগছে।
“তোমাকে এক কাপ চা দিব নাকি দুইটা। তুসি এসে প্রতিদিন দুই কাপ করে চা খেয়ে যেত। বলত একটা তার আর একটা তার পরাণ ভাইয়ের। আমি কইলাম। তুই খাইলে কি পরাণের খাওয়া হবে। সে আমারে কয় তুসি খাইলেই নাকি পরাণ ভাইয়ের খাওয়া হয়ে যাবে। হেলাল চাচার কথায় পরাণ মলিন হাসলো। হেলাল ধীর কণ্ঠে বলল,
“মাইয়াডা সারাক্ষণ জ্বালাইছে। একদিন তোমার মা রাইতের বেলা মাইয়াডারে কোথায় নিয়া গেল। আর ফিরল না মাইয়াডা। তোমার মা-রে কিছু জিগাইলেই আমার ওপরে চেইতা যায়। সেজন্য খারাপ লাগলে-ও বলি না। তুমি তুসির ব্যাপারে কিছু জানো। বিয়া দিয়া দিছ নাকি মাইয়াডারে। হেলান চাচার কথায় পরাণের ভেতরের মোচড় দিয়ে উঠল। সে কোনো রকমের উত্তর দিল, ” না। চা খেয়ে বাসায় চলে আসলো পরাণ। সে আগেই বুঝেছিল তার মা-ই তুসিকে কিছু করেছে। ঠান্ডা মাথায় তাকে কাজ করতে হবে। সে নিজের কক্ষে আসলো। পড়ার টেবিলের কাছে একটা খাতা দেখতে পেল। এই খাতাটা তো তার না। খাতা খুলতেই নজরে আসলো কিছু লিখা।
“তোমার ভাই আমার ভাই পরাণ ভাই পরাণ ভাই। এলাকাবাসী মিলে বেঁধেছে জোট। আমি একাই দিব পরান ভাইয়ের ঠোঁটে একশো কোটি ভোট। আমার ভাই তোমার ভাই পরাণ ভাই আমার জামাই। লিখা গুলো দেখে মনের অজান্তেই হেসে ফেলল পরাণ।
চলবে…..